সেনাবাহিনীকে হুমকি দিয়েছিল যারা, তাদের হাতেই কি লেফটেন্যান্ট ইশতিয়াক ও সৌরভের মৃত্যু?




সেনাবাহিনীকে হুমকি দিয়েছিল যারা, তাদের হাতেই কি লেফটেন্যান্ট ইশতিয়াক ও সৌরভের মৃত্যু?

নিজস্ব প্রতিবেদক | ২ জুন ২০২৫

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর দুই সদস্যের সাম্প্রতিক রহস্যজনক মৃত্যু নিয়ে জনমনে উঠেছে নানা প্রশ্ন। রাজধানীর ৩০০ ফিট এলাকায় ভয়াবহ সড়ক দুর্ঘটনায় নিহত হয়েছেন লেফটেন্যান্ট ইশতিয়াক আহমেদ। এর মাত্র কয়েকদিনের মাথায় গাজীপুর রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসে ফাঁসিতে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়েছে সেনা সদস্য এস এম সৌরভ হোসেনের মরদেহ। একটি সুসজ্জিত ও নিয়মানুবর্তী বাহিনীতে পরপর এমন দুইটি মর্মান্তিক ঘটনা নিছক দুর্ঘটনা না কি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড—এ নিয়ে শুরু হয়েছে তীব্র জল্পনা-কল্পনা।

জনমনে এ প্রশ্ন আরও জোরালোভাবে ঘুরপাক খাচ্ছে কারণ কিছুদিন আগে জাতীয় নাগরিক পার্টির দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আব্দুল্লাহ এবং আইনজীবী ব্যারিস্টার ফুয়াদ সেনাবাহিনীকে নিয়ে প্রকাশ্য হুমকিসদৃশ বক্তব্য দিয়েছিলেন, যা বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ও কিছু অনলাইন সংবাদপোর্টালে ছড়িয়ে পড়ে।

এক বক্তব্যে ব্যারিস্টার ফুয়াদ বলেন,

"সেনাবাহিনী যদি নিজেদের সীমার বাইরে যায়, তাহলে তাদের কী পরিণতি হতে পারে, তারা নিজেরাই দেখে নেবে।"

অন্যদিকে হাসনাত আব্দুল্লাহর ভাষ্য ছিল,

"বিভিন্ন এলাকায় সেনাবাহিনীর ওপর নজর রাখা হচ্ছে। কিছুই গোপন নয়। সময় এলে জনগণ জবাব দেবে।"

এমন স্পষ্ট হুঁশিয়ারির পরপরই সেনাবাহিনীর দুটি ট্র্যাজেডির খবর সামনে আসা নিঃসন্দেহে উদ্বেগজনক। বিশেষজ্ঞ ও নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি নিছক কাকতালীয় হতে পারে, তবে ঘটনাগুলোর পেছনে ষড়যন্ত্রের ইঙ্গিত একেবারে উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।

যা ঘটেছে:

  • ২৬ মে: ঢাকার ৩০০ ফিট সড়কে উচ্চগতির যানবাহনের ধাক্কায় লেফটেন্যান্ট ইশতিয়াক নিহত হন। একই ঘটনায় আরও কয়েকজন সেনা কর্মকর্তা আহত হন।

  • ১ জুন: গাজীপুর রাজেন্দ্রপুর সেনানিবাসের ওয়ার্কশপ ভবনে ফাঁসিতে ঝুলন্ত অবস্থায় উদ্ধার হয় এস এম সৌরভ হোসেনের মরদেহ।

বিশ্লেষকদের মত:

নিরাপত্তা বিশ্লেষক লে. কর্নেল (অব.) মাহবুবুল হাসান বলেন,

"যদি সত্যিই কেউ পরিকল্পিতভাবে সেনাবাহিনীর সদস্যদের টার্গেট করে থাকে, সেটা রাষ্ট্রের নিরাপত্তার জন্য মারাত্মক হুমকি। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এখনই শক্ত অবস্থান নিতে হবে।"

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী এই দুটি ঘটনার তদন্ত শুরু করলেও এখনও পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোনো সন্দেহভাজনের নাম প্রকাশ করা হয়নি। তবে সামাজিকভাবে সেনাবাহিনীকে হেয়প্রতিপন্ন করা এবং মনোবল ভেঙে দেওয়ার উদ্দেশ্যে কোনো গোষ্ঠী সক্রিয় কিনা, সে প্রশ্ন এখন সামনে আসছে।

জনমনে প্রশ্ন:

  • সেনাবাহিনীর বিপক্ষে যেসব উস্কানিমূলক বক্তব্য সম্প্রতি প্রচারিত হয়েছে, সেগুলোর পেছনে কোন রাজনৈতিক বা অপারেটিভ শক্তি রয়েছে?

  • নিহতদের ব্যক্তিগত বা পেশাগত জীবনে এমন কিছু ঘটেছিল কি, যা তাদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করেছে?

  • সেনাবাহিনীর সদস্যদের মৃত্যু কি আদৌ দুর্ঘটনা না কি এটি বড় কোনো ষড়যন্ত্রের সূচনা?

সরকারি তদন্তের স্বচ্ছতা ও দ্রুত অগ্রগতি নিশ্চিত না হলে এই সন্দেহ আরও গাঢ় হবে বলেই মনে করছেন সাধারণ নাগরিক থেকে শুরু করে সাবেক সেনা কর্মকর্তারা।

উপসংহার:
জাতীয় নিরাপত্তা ও প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদার প্রশ্নে এসব ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত অত্যন্ত জরুরি। যারা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে উসকানিমূলক বক্তব্য দিয়েছেন, তাদের ভূমিকা তদন্তের আওতায় আনা উচিত কিনা, সে প্রশ্ন এখন সময়ের দাবি।



Post a Comment

Previous Post Next Post