চাঁদাবাজদের ঠাঁই হবে না আগামীর বাংলাদেশে: সারজিস আলম
বিরল (দিনাজপুর), প্রতিনিধি: এম. এ. কুদ্দুস
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)-এর উত্তরাঞ্চলীয় মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম বলেছেন, “আগামীর বাংলাদেশে কোনো চাঁদাবাজের জায়গা হবে না। সে যে দলেরই হোক, যত বড় ক্ষমতাবানই হোক—চাঁদাবাজদের বিরুদ্ধে আমরা রুখে দাঁড়াব।”
বুধবার দিনাজপুর জেলার বিরল পৌর শহরের বকুলতোলা মোড়ে এনসিপির পথসভায় এসব কথা বলেন তিনি।
তিনি বলেন, “একটি উপজেলা বা জেলার চাঁদাবাজ নেতা যতই ক্ষমতাধর হোক, তিনি শেখ হাসিনার চেয়েও শক্তিশালী নন। শেখ হাসিনার পতন ঘটতে পারে, তাহলে এই চাঁদাবাজদের পতনও অবশ্যই সম্ভব।”
সারজিস আলম আরও বলেন, “ভোটের সময় মার্কা নয়, মানুষকে গুরুত্ব দিতে হবে। যে ব্যক্তি টাকা ছাড়া কথা বলে না, মানুষের পাশে থাকে না, শুধু পরিচিতি বা মার্কা দিয়ে ভোট আদায় করতে চায়—তাদের বাদ দিতে হবে। যারা ভালো, যারা মানুষের দুঃখ-দুর্দশা বোঝে এবং নির্বাচনের বাইরেও মানুষের খোঁজখবর রাখে, তারাই আগামী বাংলাদেশে নেতৃত্ব দেওয়ার যোগ্য।”
মাদকের বিরুদ্ধে কড়া অবস্থান
সীমান্তবর্তী এলাকায় মাদক ব্যবসা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “প্রতিটি সীমান্ত এলাকার উপজেলায় মাদকের চোরাচালান হয়। এসব ব্যবসা চালায় রাজনৈতিক দলের চৌকস কিছু নেতা, যারা দিনে সাধু সেজে থাকেন আর রাতে মাদক সিন্ডিকেট চালান। এদের চিহ্নিত করতে হবে এবং তাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে হবে।”
তিনি আরও বলেন, “ভালো পুলিশ সদস্যদের প্রশংসা করুন, তাদের কাজ সামনে তুলে ধরুন। কিন্তু যদি কোনো পুলিশ ঘুষ ছাড়া কাজ না করে, তাহলে তার অপকর্ম সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে দিন। এটাই প্রযোজ্য সকল রাজনৈতিক নেতার ক্ষেত্রেও।”
ভালো নেতা পেতে হলে হতে হবে সচেতন ভোটার
তিনি বলেন, “আপনি যদি ভালো নেতা চান, তাহলে আগে নিজেকে ভালো ভোটার হিসেবে গড়ে তুলুন। আমরা কাউকে না বলছি আমাদের ভোট দিতে, না বলছি অন্যদের বাদ দিতে। ভালো লোক যদি অন্য দলে থাকে তাও ভালো, কিন্তু খারাপ লোক যে দলেরই হোক, তার বিরুদ্ধে অবস্থান নিতে হবে।”
মামলা ব্যবসা নিয়ে অভিযোগ
বিরল উপজেলায় ‘মামলা ব্যবসা’ নিয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে সারজিস বলেন, “রাজনৈতিক প্রতিহিংসার জেরে নিরপরাধদের ফাঁসাতে মামলা দিয়ে টাকা উপার্জনের পাঁয়তারা চলছে। এটি বন্ধ করতে হবে। কেউ নিরপরাধ হলে তাকে হয়রানি করা যাবে না। যারা অন্যায় করে, ইতিহাস বলছে, তাদের ওপরই একদিন সেই অন্যায় ফিরে আসে।”
উন্নয়ন বৈষম্যের বিরুদ্ধে সোচ্চার
রংপুর বিভাগে উন্নয়নের বৈষম্য নিয়ে তিনি বলেন, “রংপুর অঞ্চল বরাবরই অবহেলিত। আমি মাঠপর্যায়ে ঘুরে মানুষের সমস্যা শোনার জন্য এসেছি। একটি জেলার উন্নয়ন বুঝতে হলে জানতে হবে—রাস্তা-ঘাট, হাসপাতাল, পুলিশ, ভূমি অফিস, বাজার-ঘাট, সব জায়গায় বাস্তব চিত্র কী।”
শেষ কথা
সারজিস আলম বলেন, “যারা সুযোগসন্ধানী, চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী, মামলা ব্যবসায়ী—তাদের এখনই প্রত্যাখ্যান করতে হবে। নইলে কাল তারা আপনাদেরই বিরুদ্ধে দাঁড়াতে পারে।”
এই বক্তব্যটি এনসিপির চলমান উত্তরাঞ্চল সফরের অংশ হিসেবে বিরলে অনুষ্ঠিত পথসভা থেকে উঠে এসেছে।