**কুমিল্লা পলিটেকনিকে বিক্ষোভে উত্তাল পরিস্থিতি: গুলিতে নিহত ৩ শিক্ষার্থী, দুই সেনা সদস্য বহিষ্কৃত**
**নিজস্ব প্রতিবেদক**
**তারিখ: ১৬ এপ্রিল ২০২৫ | কুমিল্লা**
কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে চলমান ছয় দফা দাবিতে চলা শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ রূপ নেয় রক্তাক্ত সংঘর্ষে। বিক্ষোভ চলাকালে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে উত্তপ্ত পরিস্থিতিতে সেনাবাহিনীর একটি ইউনিটের গুলিতে প্রাণ হারিয়েছে তিন শিক্ষার্থী। গুরুতর আহত অবস্থায় আরও অন্তত ১৫ জনকে কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
বুধবার বিকেলে বিক্ষোভরত শিক্ষার্থীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কোটবাড়ি এলাকায় অবস্থান নিলে নিরাপত্তা বাহিনীর সদস্যরা বাধা দেওয়ার চেষ্টা করেন। এ সময় উত্তেজনা বাড়তে থাকে, একপর্যায়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনা সদস্যরা গুলি ছোড়ে। প্রত্যক্ষদর্শীদের দাবি, গুলি ছোড়ার পূর্বে কোনও পূর্ব সতর্কতা দেওয়া হয়নি।
নিহত তিনজনই কুমিল্লা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের বিভিন্ন বর্ষের শিক্ষার্থী। তাদের নাম—মাসুদ রানা (২য় বর্ষ), জুবায়ের হোসেন (৩য় বর্ষ), ও রাফিন হোসেন (৪র্থ বর্ষ)। এ ঘটনায় পুরো ক্যাম্পাসজুড়ে শোক ও ক্ষোভের ছায়া নেমে এসেছে।
বিষয়টি নিয়ে রাতে জরুরি বৈঠক করে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়। বৈঠক শেষে এক বিবৃতিতে জানানো হয়, প্রাথমিক তদন্তে দায়িত্বহীন ও অতিরিক্ত বল প্রয়োগের প্রমাণ পাওয়ায় অভিযুক্ত দুই সেনা সদস্য—সার্জেন্ট মাহবুব ও কর্পোরাল রফিকুল ইসলাম—কে সাময়িকভাবে চাকরি থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। এছাড়াও ঘটনাটি উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি গঠন করে ৭২ ঘণ্টার মধ্যে প্রতিবেদন দিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, শিক্ষার্থীরা আজ রাতেই নতুন কর্মসূচির ঘোষণা দিয়েছে। তারা নিহত শিক্ষার্থীদের ‘শহীদ’ ঘোষণা করে আগামী তিন দিনের জন্য শোক পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং সকল ক্লাস ও পরীক্ষা বর্জনের ডাক দিয়েছে।
শিক্ষার্থীরা দাবি জানিয়েছেন, নিহতদের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ, অভিযুক্তদের দ্রুত বিচারের আওতায় আনা এবং ইনস্টিটিউটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।
সারাদেশের বিভিন্ন পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে এই ঘটনার প্রতিবাদে বিক্ষোভ শুরু হয়েছে। রাজনৈতিক ও সামাজিক বিভিন্ন সংগঠনও ঘটনার নিন্দা জানিয়ে দায়ীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেছেন, “এই ধরনের ঘটনা কখনোই কাম্য নয়। আমরা ঘটনায় জড়িত কাউকে ছাড় দেব না। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা আমাদের অগ্রাধিকার।”
এই রক্তক্ষয়ী ঘটনার পর কুমিল্লা পলিটেকনিকসহ আশেপাশের এলাকা এখন থমথমে। বাড়ানো হয়েছে নিরাপত্তা। তবে শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, বিচার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চলবে।
---
**প্রসঙ্গত:** কুমিল্লা পলিটেকনিকে আগেও শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা, আবাসন সমস্যা ও মর্যাদার দাবিতে আন্দোলন হয়ে আসছিল। কিন্তু এই প্রথম এমন প্রাণঘাতী পরিণতির সাক্ষী হলো ক্যাম্পাস।
**ইত্তেফাক/নিজস্ব**
**বিষয়: ছাত্র আন্দোলন, কুমিল্লা, সেনাবাহিনী, শিক্ষা, সহিংসতা**