ধর্ষণের চেষ্টা হলে আত্মরক্ষায় নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়া কি অপরাধ?*



### **ধর্ষণের চেষ্টা হলে আত্মরক্ষায় নিজের হাতে আইন তুলে নেওয়া কি অপরাধ?**  

**ব্যারিস্টার ইফফাত গিয়াস আরেফিন**  

**প্রকাশ: ২৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৫, ০২:১৭ পিএম**  


ধর্ষণ একটি গুরুতর অপরাধ, যা ভুক্তভোগীর জীবন ও মর্যাদার ওপর সরাসরি আঘাত হানে। কিন্তু প্রশ্ন হলো—যদি কেউ ধর্ষণের শিকার হওয়ার ঝুঁকিতে থাকেন, তাহলে আত্মরক্ষার জন্য অপরাধীকে আঘাত করা বা প্রাণঘাতী প্রতিরোধ গড়ে তোলা আইনের দৃষ্টিতে বৈধ হবে কি না? এ বিষয়ে বাংলাদেশের প্রচলিত আইন এবং আন্তর্জাতিক বিধিবিধান কী বলে, তা পর্যালোচনা করা জরুরি।  


### **বাংলাদেশের আইনে আত্মরক্ষা**  

বাংলাদেশ দণ্ডবিধি, ১৮৬০-এর ৯৬ থেকে ১০৬ ধারা আত্মরক্ষার অধিকার সম্পর্কে বিস্তারিত নির্দেশনা দিয়েছে। এখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে, যদি কেউ নিজের জীবন বা অন্য কাউকে গুরুতর শারীরিক ক্ষতির হাত থেকে রক্ষা করতে প্রয়োজনীয় বলপ্রয়োগ করেন, তবে তা আত্মরক্ষা হিসেবে গণ্য হবে এবং সেটি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হবে না।  


### **কখন প্রাণঘাতী আঘাত বৈধ?**  

দণ্ডবিধির ১০০ ধারা অনুযায়ী, আত্মরক্ষার জন্য প্রাণঘাতী আঘাত তখনই বৈধ হবে, যখন—  


1. কেউ ভুক্তভোগীর শারীরিক অবমাননার চেষ্টা চালায় (যেমন: ধর্ষণ বা শ্লীলতাহানি)।  

2. অপরাধী প্রাণনাশের হুমকি দেয় বা অস্ত্র নিয়ে আক্রমণ করে।  

3. আত্মরক্ষা না করলে ভুক্তভোগীর গুরুতর আহত বা নিহত হওয়ার আশঙ্কা থাকে।  


ধর্ষণের চেষ্টা সরাসরি একজন নারীর মর্যাদা ও জীবন বিপন্ন করে। তাই, ভুক্তভোগী প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে গিয়ে যদি অপরাধী গুরুতর আহত হন বা মারা যান, তাহলে সেটি সাধারণত আত্মরক্ষার আওতায় পড়বে এবং আইনি অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে না।  


### **আত্মরক্ষার সীমারেখা**  

আইন আত্মরক্ষার অধিকার দিলেও এটি ‘যথাযথ বলপ্রয়োগ’ (Proportionate Force) হতে হবে। অর্থাৎ, আত্মরক্ষার জন্য যে পরিমাণ শক্তি প্রয়োগ করা হচ্ছে, তা অবশ্যই পরিস্থিতি অনুযায়ী ন্যায্য হতে হবে। প্রতিশোধমূলকভাবে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করা হলে সেটি কখনো কখনো ফৌজদারি অপরাধ হিসেবে বিবেচিত হতে পারে।  


### **আন্তর্জাতিক আইনে আত্মরক্ষা**  

আন্তর্জাতিকভাবে আত্মরক্ষার অধিকারকে মানবাধিকারের অংশ হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার সনদসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তিতে নারীদের আত্মরক্ষার অধিকার সমর্থন করা হয়েছে। ধর্ষণ বা যৌন নির্যাতন প্রতিরোধে কেউ যদি প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করেন এবং তাতে অপরাধী আহত বা নিহত হয়, তবে অধিকাংশ আন্তর্জাতিক আইনে সেটি আত্মরক্ষা হিসেবে গণ্য হয়।  


### **বাংলাদেশের আইনি বাস্তবতা**  

যদিও বাংলাদেশে আত্মরক্ষার অধিকার স্বীকৃত, কিন্তু বিচার ব্যবস্থার জটিলতা এবং সামাজিক ধ্যানধারণার কারণে ভুক্তভোগীদের আইনি লড়াই কঠিন হয়ে ওঠে। অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ বা আদালত আত্মরক্ষার যুক্তি উপেক্ষা করতে পারে, বিশেষ করে যদি ভুক্তভোগী নারী হন। তাই, আত্মরক্ষার আইনি দিক সম্পর্কে সচেতনতা বাড়ানো এবং যথাযথ আইনি সহায়তা নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।  


### **উপসংহার**  

ধর্ষণ চেষ্টার সময় আত্মরক্ষায় অপরাধীকে আঘাত করা বা প্রয়োজনে প্রাণঘাতী প্রতিরোধ গড়ে তোলা আইনসম্মত, যদি সেটি ভুক্তভোগীর জীবন রক্ষার জন্য অত্যাবশ্যক হয়। আত্মরক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ, পাশাপাশি সচেতনতা বৃদ্ধি ও আইনের যথাযথ প্রয়োগ নারীদের সুরক্ষার জন্য অপরিহার্য।  


**লেখক: আইনজীবী, বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট**

Post a Comment

Previous Post Next Post